ভয়াবহ ভূমিকম্প: নিহতের সংখ্যা ২২০০ ছাড়াল, বৃষ্টিতে অনাহারে শত শত মানুষ

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে সপ্তাহান্তে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বৃহস্পতিবার হঠাৎ বেড়ে দুই হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে। নতুন হিসাব অনুযায়ী এটি দেশটির কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে ক্রমাগত বৃষ্টি পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে।

রিখটার স্কেলে ৬.০ মাত্রার এই ভূমিকম্পটি রবিবার গভীর রাতে পাকিস্তান সীমান্তবর্তী দুর্গম পার্বত্য এলাকায় আঘাত হানে।

তালেবান সরকারের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শুধু কুনার প্রদেশেই দুই হাজার ২০৫ জন নিহত ও তিন হাজার ৬৪০ জন আহত হয়েছে। নানগারহার ও লাগমান প্রদেশে আরো ১২ জন নিহত ও কয়েক শ মানুষ আহত হয়েছে।
তালেবান সরকারের উপ-প্রবক্তা হামদুল্লাহ ফিত্রাত বৃহস্পতিবার এক্সে লিখেছেন, ‘ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া ঘরবাড়ি থেকে শত শত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, উদ্ধার তৎপরতা এখনো চলছে।’

এদিকে ভূমিকম্পের পর চার রাত-দিন কাটলেও কুনারের শেল্ট গ্রামের কৃষক খান জামান হানাফি মনে করেছিলেন, দুঃস্বপ্ন হয়তো শেষ।

কিন্তু এরপরই নেমেছে অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি। ৩৫ বছর বয়সী এই কৃষক বলেছেন, ‘আমাদের গ্রামটিকে সরকার ও সাহায্য সংস্থাগুলো ভুলে গেছে। বৃষ্টি হচ্ছে, আর আমরা খোলা মাঠে থাকতে বাধ্য হচ্ছি।’ তিনি তার পরিবার নিয়ে ভুট্টাক্ষেতে আশ্রয় নিয়েছেন।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কুনারের দুর্গম অঞ্চলে প্রবেশ সীমিত থাকায় উদ্ধার ও ত্রাণকাজ বিলম্বিত হচ্ছে। বারবার আফটারশকের কারণে ভূমিধস নাজুক পাহাড়ি সড়কগুলোকে আরো বিপজ্জনক করে তুলেছে। বিভিন্ন দেশ থেকে ত্রাণ পৌঁছালেও, কুনারের নুরগাল জেলায় শত শত গ্রামবাসী এখনো খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য। অনেকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে আনা প্লাস্টিক বা কাপড়ের টুকরো দিয়ে অস্থায়ী ছাউনি তৈরি করে একাধিক পরিবার একসঙ্গে দিন কাটাচ্ছেন—খাবার কোথায় পাবেন তা অনিশ্চিত।

মাজার দারার খোলা প্রান্তরে শত শত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

সেখানে অল্প কিছু খাবার পৌঁছালে তা নিয়ে লড়াই বাধে। ৪৮ বছর বয়সী জাহির খান সাফি বলেন, ‘গতকাল কিছু মানুষ খাবার এনেছিল, সবাই ছুটে গিয়েছিল। মানুষ না খেয়ে আছে, আমরা অনেকদিন ধরে কিছু খাইনি।’
এই উপত্যকাগুলো একসময় পাকিস্তানের সঙ্গে যোদ্ধাদের চলাচলের পথ ও চোরাচালানের জন্য পরিচিত ছিল। পাহাড়ের গায়ে মাটির ঘরগুলো একটার ওপর আরেকটা সাজানো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *